কোন ধরনের ঝামেলা/ ইস্যু নিয়ে কথা বলবেন?
ইন্টারভিউতে অবশ্যই পেশাগত ইস্যু নিয়ে কথা বলবেন। ব্যক্তিগত বা চাকরির সাথে জড়িত নয় এমন ইস্যু তুলে ধরে অপরিপক্ক মনোভাবের পরিচয় দেওয়া উচিত নয়। আপনার অভিজ্ঞতানুযায়ী যেকোন একটি ঘটনা তুলে ধরবেন। আর যদি ফ্রেশার হয়ে থাকেন তাহলে আপনার ইতিবাচক দিক আর দক্ষতার সাথে কিভাবে মোকাবেলা করবেন তা তুলে ধরতে পারেন। আপনি অভিজ্ঞ বা অনভিজ্ঞ যেই হন না কেন স্টার মেথড (STAR Method) অনুসরণ করে এই প্রশ্নের উত্তর যথাযথভাবে দেওয়া সম্ভব। এই মেথডের চারটি অংশ। যথা- সিচুয়েশন (Situation), টাস্ক (Task), অ্যাকশন/ অ্যাপ্রোচ (Action/ Approach), রেজাল্ট (Result)।
১. সিচুয়েশন (Situation):
এখানে একটি সিনারি (Scenary) সেট করে তার জন্য প্রয়োজনীয় বিবরণ দিয়ে উদাহরণ দিতে হবে। যেমন- বস ও আপনার ঠিক কি কারণে মনোমালিন্য হয়েছিল বা হলে কি করবেন তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরতে হবে। কিন্তু একতরফা ব্যাখ্যা, অপ্রয়োজনীয় তথ্য অথবা নেতিবাচক মতামত দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। আপনাকে এমপ্লয়ার এর দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও চিন্তা করে উত্তর দিতে হবে। কিছু সিচুয়েশনের উদাহরণ হল-
১. অযৌক্তিক লক্ষ্য এবং সময়সীমা
২. অযৌক্তিক গ্রাহক এবং ক্লায়েন্ট
৩. অনৈতিক কাজ
৪. বিশৃঙ্খলা
৫. পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে না পারা
৬. বৈষম্য
৭. নেতৃত্ব
২. টাস্ক (Task):
সেই সিচুয়েশনে (Situation) আপনার কি ভূমিকা, দায়িত্ব ও লক্ষ্য ছিল বা হতে পারে তা অবশ্যই তুলে ধরতে হবে।
এছাড়াও নিম্নলিখিত বিষয়ের প্রতি জোরদার করতে হবে-
১. সহমর্মী মনোভাব থাকতে হবে
২. সমস্যার কারণ খতিয়ে দেখতে হবে
৩. অযথা কাউকে দোষারোপ করা যাবে না
৪. আবেগের বশবর্তী হওয়া যাবে না
৩. অ্যাকশন/ অ্যাপ্রোচ (Action/ Approach):
সমস্যা সমাধানে আপনার পদক্ষেপ কি ছিল বা হতে পারে তা তুলে ধরতে হবে। “আমি অনেক কঠোর পরিশ্রম করেছি”- এই ধরনের দূর্বল উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনার অবদান, কাজ সম্পর্কে সঠিক ও নির্ভূল তথ্য দিতে চেষ্টা করবেন। এতে এমপ্লয়ার আপনার প্রব্লেম সলভিং স্কিল (Problem Solving Skill), কনফ্লিক্ট রেজ্যুলেশন স্কিল (Conflict Resolution Skill), কম্প্রোমাইজ স্কিল (Compromise Skill), অধ্যবসায় (Perseverance), অ্যানালাইটিক্যাল স্কিল (Analytical Skill), ডিপ্লোমেসি (Diplomacy), স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট (Stress Management) সম্পর্কে ধারণা পাবে। ফলে আপনি তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত কিনা তা নির্ণয় করা সহজ হবে।
৪. রেজাল্ট (Result):
আপনাকে অবশ্যই আপনার পদক্ষেপ থেকে প্রাপ্ত ইতিবাচক ফলাফল তুলে ধরতে হবে। এতে কিভাবে সমস্যার সমাধান হয়েছে, আপনি ও আপনার বস কি শিক্ষালাভ করেছেন, ভবিষ্যতের জন্য তা কতটুকু কার্যকরী হবে- সে সম্পর্কে বলতে হবে। মনে রাখবেন, আপনি ব্যর্থ হয়েছেন এমন কোন সিচুয়েশনের কথা না বলাই উত্তম। আর যদি বলে থাকেন তবে তা থেকে ইতিবাচক কি কি শিক্ষা পেয়েছেন এবং ভবিষ্যতের কোন কোন দিকগুলো সংশোধন করতে চান তা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
নিচে একটি উদাহরণ দেওয়া হল-
সিচুয়েশন
আমি একটি প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলাম। একবার একজন ক্লায়েন্ট আমার ইমেইল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন নিয়ে বসের কাছে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। আমার বস ক্লায়েন্টকে সমর্থন করেন এবং তিনি আমার উপর অসন্তুষ্ট হন। আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম এবং আমি আমার কাজের ব্যাখ্যা দেওয়ার যথাযথ চেষ্টা করি।
টাস্ক
আমি আমার বসকে যথাসম্ভব শ্রদ্ধা রেখে বোঝাতে চেষ্টা করি যে যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ ও অনুসন্ধান করেই এই ক্যাম্পেইনের কাজ করা হয়েছে। কারণ, ক্যাম্পেইন কেন এভাবে করা হয়েছে তা নিয়ে যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলাম।
অ্যাকশন
যুক্তিসংগত ব্যাখ্যার ফলে বস শান্ত হয়ে পুরো ব্যাপারটি বুঝতে পারলেন এবং তিনি আমাকে আমার ভুল-ত্রুটিগুলোও ধরিয়ে দেন। এছাড়া, পরবর্তীতে এই ধরনের ভুল যাতে না হয় সতর্ক করেন। আমি ক্লায়েন্ট এর কাছে যথাযথ ব্যাখ্যা দিয়ে বিগত ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং পরবর্তী ক্যাম্পেইন এর পরিকল্পনার জন্য তার মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলি।
রেজাল্ট
এর মাধ্যমে আমি ইমেইল মার্কেটিং সম্পর্কেও বিস্তারিত জানতে পারি এবং সরাসরি যোগাযোগের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করি। সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে যেমন যেকোন কাজ সম্পর্কিত দ্বিধা দূর করা যায় তেমনি পেশাগত সম্পর্কেরও উন্নতি ঘটে।
পরিশেষে বলা যায়, এই প্রশ্নের মাধ্যমে আপনি আপনার ইন্টারপার্সোনাল স্কিল (Interpersonal Skill), কনফ্লিক্ট রেজ্যুলেশন স্কিল (Conflict Resolution Skill), যোগাযোগ দক্ষতা (Communication Skill), পরিপক্কতা (Maturity) ইত্যাদি যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারেন। ফলে কর্মক্ষেত্রে সাফল্য লাভ সম্ভব। শুভ কামনা।
Job Teknik in Worldwide.